ভালো থেকো প্রিয়তমা। নিয়তি হয়তে আমাদের আলাদা করে দিলো, কিন্তু ভালোবাসা কখনো আলাদা হবেনা।
লাল বেনারশি পড়ে আমার বাড়িতে আসার কথা থাকলেও, সাদা কাফন নামক কাপড়টাই শেষ সময়ে পড়তে হলো।কতো আশা,আকাঙ্খা সব একটি এক্সিডেন্টে তছনছ করে দিলো।এমন একটা দিন যাই নি তোমার সাথে কথা বলি নি।সাড়ে তিন বছরের সম্পর্কে একটা দিনও কথা না বলে থাকোনি। আজকে কিভাবে কথা না বলে থাকবে পরপারে?আর আমি বা জীবন কিভাবে পার করবো ভেবেছিলে?
সবাই আমার ভালোবাসার মানুষটির জন্য একটু আশির্বাদ করবেন। কথাগুলো লিখে ফেইসবুক ষ্টাটাস দিয়েছিলেন সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত রিমঝিম বড়ুয়ার হবু স্বামী সানি বড়ুয়া ।
আগামী ৬ জুলাই রিমঝিম বড়ুয়ার বিয়ের দিন নির্ধারিত হয়। চট্টগ্রামের পটিয়ার ভান্ডাগাঁওয়ের যুবক সানি বড়ুয়ার সাথে নতুন জীবনের স্বপ্ন বেঁধেছিলেন এই তরুণী। কক্সবাজারের রামুর নিজ বাড়ি থেকে বিয়ের কেনাকাটা করতে যাচ্ছিলেন চট্টগ্রাম শহরে । পথের মধ্যেই যেন তাদের সেই নতুন স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল । নিভে গেল তাদের সেই সাড়ে তিন বছরের স্বপ্ন বুননের কাহিনী ।
সোমবার সকালে চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কের রামু রশিদনগর এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান রামুর পূর্ব রাজারকূল গ্রামের হিমাংসু বড়ুয়ার মেয়ে কলেজছাত্রী রিমঝিম বড়ুয়া (২২)। এ ঘটনায় আরো এক পরিবারের পিতা–পুত্র নিহত হয়েছেন।
নিহত রিমঝিম বড়ুয়ার আত্নিয়রা জানান, নিহত রিঝঝিম বড়ুয়া কক্সবাজার সরকারি কলেজের ডিগ্রি শেষ বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। পাশাপাশি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে একটি এনজিওতে চাকরি করতেন। সম্প্রতি পারিবারিকভাবে তার বিয়ে ঠিক হয়। বর চট্টগ্রামের পটিয়ার ভান্ডারগাঁওয়ের ব্যবসায়ী যুবক সানি বড়ুয়া। আগামী ৬ জুলাই বিয়ের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। তিনি জানান, গতকাল দুই পরিবারের সদস্যরা মিলে চট্টগ্রাম থেকে বিয়ের কেনাকাটা করার কথা ছিল।
সে অনুযায়ী সকালে পুরবী পরিবহনের একটি বাসে একাই রামু থেকে চট্টগ্রামের যাচ্ছিল রিমঝিম। তার বিবাহিত বোন ও এক ছোট বোন চট্টগ্রামে থাকে। তাদের সাথে নিয়ে বরের পরিবারের লোকজনসহ কেনাকাটা করার কথা ছিল।এক ভাই, তিন বোনের মধ্যে তৃতীয় ছিল রিমঝিম।
সকাল বেলা রামু থেকে উঠেছিলেন চট্টগ্রামগামী বাসে—কিন্তু পানির ছড়ার আগেই পূরবী এসি বাস ও কভার ভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষ। এক ঝটকায় বাসটা গড়িয়ে পড়ে গভীর খাদে। ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারালেন রিমঝিমসহ ৩জন।
বাবার সংসারে কিছুটা স্বচ্ছলতা এনে দিতে পড়ালেখার পাশাপাশি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চাকরি নিয়েছিল। চাকরি, পরিবার এবং নতুন জীবনের স্বপ্ন নিয়ে খুশি ছিল সে।
বধু সেজে ওঠার কথা ছিল বিয়ের মঞ্চে, সবাই আসবে স্বামীর হাতে তুলে দিবে জীবনের শেষদিন পর্যন্ত্য ভরন পোষনের জন্য , তারপর আবার নতুন সংসার নতুন জীবন । হায়রে নিয়তি সাদা কাফনের কাপড়ে মোড়ানো হলই তার নতুন জীবন।