কক্সবাজারের ২৪ হাজার ৭৬০ জন কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী, নারী এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে স্বনির্ভর করে তোলার লক্ষ্যে কাজ চলছে ‘ইমপ্রুভিং স্কিলস অ্যান্ড ইকোনমিক অপরচুনিটিজ ফর দি ওমেন অ্যান্ড ইউথ ইন কক্সবাজার (আইএসইসি-ISEC)’ প্রকল্পটি। ব্র্যাকের পক্ষ থেকে এই প্রকল্পের আওতায় চলতি বছর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৬ হাজার ৮৯৪ জনকে কর্মসংস্থান ও স্বনির্ভর হওয়ার সুযোগ সৃষ্টিতে সহায়তা করা হয়েছে।
২০২৩ সালে শুরু হওয়া এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হচ্ছে শিক্ষা, কর্মসংস্থান বা প্রশিক্ষণের সঙ্গে যুক্ত নয় কক্সবাজারের এমন কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী, নারী এবং প্রতিবন্ধি ব্যক্তিদের বাজার উপযোগী, জেন্ডার-সংবেদনশীল দক্ষতা ও উদ্যোক্তা উন্নয়নের মাধ্যমে কর্মসংস্থান ও স্বনির্ভর হাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করা। গ্লোবাল এফেয়ার্স কানাডার (গ্যাক-GAC) আর্থিক সহায়তায় ব্র্যাক, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও-ILO) এবং ইউএনডিপি (UNDP) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। চলতি বছর প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হচ্ছে।
প্রকল্পের আওতায় ‘আল্ট্রা পুওর গ্র্যাজুয়েশন’ মডেলের মাধ্যমে অতিদারিদ্র বিমোচন ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা তৈরি, প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ, শিক্ষানবিশ কর্মী হিসেবে দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ, বিদ্যমান ব্যবসার উন্নয়ন ও উদ্যোক্তার দক্ষতা বৃদ্ধি এবং ‘ক্যারিয়ার হাব’ মডেলের মাধ্যমে কর্মসংস্থানে স্থানীয় অধিবাসীদের (হোস্ট কমিউনিটি) সহায়তা করা হচ্ছে।
আইএসইসি প্রকল্পের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণকে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ হিসেবে চিন্তা করার জন্য সাধারণ মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, নারী ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক কর্মক্ষেত্রে সম্পৃক্ত করা এবং প্রচলিত ধারার বাইরে অন্যান্য পেশাকে তরুণ-তরুণীদের মধ্যে জনপ্রিয় করে তোলা।
“কাউকে বাদ না দিয়ে”-এই দৃষ্টিভঙ্গিকে গুরুত্ব দিয়ে আইএসইসি প্রকল্পটি স্থানীয় কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী, নারী এবং প্রতিবন্ধি ব্যক্তিদের উপর বিশেষভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে, যারা কর্মসংস্থান এবং দক্ষতা উন্নয়নে নানা চ্যালেঞ্জের সম্মুখিন হচ্ছেন। ব্র্যাক তার প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা ও দীর্ঘ অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে দক্ষতা উন্নয়ন, জীবিকা এবং জেন্ডারকে মূলধারায় সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে এই প্রকল্পের লক্ষ্য অর্জনে কাজ করছে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের অন্যতম অনুন্নত জেলা কক্সবাজারে ২৬ লাখেরও বেশি স্থানীয় মানুষের বসবাস। এখানে দারিদ্র্যের হার ৩৩ শতাংশ যা জাতীয় গড় হারের চেয়েও বেশি। উপরন্তু ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর আগমনের ফলে স্থানীয় পর্যায়ে খাদ্য নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান এবং সামগ্রিকভাবে সমাজ ব্যবস্থায় চাপ বেড়েছে। এদিকে চাহিদা অনুযায়ী দক্ষতার অভাবে স্থানীয় তরুণ-তরুণী ও নারীরা অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানে পিছিয়ে পড়ছেন। এই বাস্তবতায় আইএসইসি প্রকল্পের আওতায় অংশগ্রহণকারীদের দক্ষতা বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান এবং স্বনির্ভরতার সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে সম্মিলিতভাবে কাজ করছে ব্র্যাক, আইএলও এবং ইউএনডিপি।