রবিবার, জুন ৮, ২০২৫
spot_img

রাখাইনে মানবিক সহায়তা পাঠাতে জাতিসংঘ উদ্যোগে যুক্ত হচ্ছে বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

মায়ানমারের গৃহযুদ্ধকবলিত রাখাইন রাজ্যে মানবিক সহায়তা পাঠাতে জাতিসংঘের উদ্যোগে বাংলাদেশের যুক্ত হওয়ার কথা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ খলিলুর রহমান। মঙ্গলবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক ব্রিফিংয়ে তিনি জানান, এ লক্ষ্যে বাংলাদেশের সঙ্গে মায়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির আলোচনা চলেছে এবং জাতিসংঘ সেই আলোচনায় মধ্যস্থতা করছে।

খলিলুর রহমান বলেন, “আরাকানে শান্তি ও স্থিতি ফিরিয়ে আনতে হবে, যাতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পথ প্রশস্ত হয়। এখন সেখানে মানবিক সংকট চলছে, আমরা চেষ্টা করছি আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহায়তায় পরিস্থিতি কিছুটা হলেও উন্নত করতে। সেজন্য দরকার যুদ্ধবিরতি।”

তিনি আশা প্রকাশ করেন, জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে মানবিক সহায়তা পাঠানোর উদ্যোগে বিবদমান পক্ষগুলো যুদ্ধ থেকে বিরত থাকবে এবং এর ফলে একটি স্থিতির সূচনা হবে, যা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বাস্তব আলোচনার পথ তৈরি করবে।

রাখাইনের মানবিক সংকটে বাংলাদেশের সম্পৃক্ততাকে আন্তর্জাতিক দায়িত্ব বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমাদের চেষ্টায় কোনো ঘাটতি থাকবে না। আমরা চেষ্টা করব, যাতে মানবিক সাহায্য প্রদানের মাধ্যমে আরাকানে শান্তি ও স্থিতির পরিবেশ সৃষ্টি হয়।”

তিনি জানান, গত ৭ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে আলোচনায় ‘হিউম্যানিটারিয়ান চ্যানেলে’ বাংলাদেশের সম্পৃক্ততার বিষয়টি প্রথম আলোচনায় আসে। জাতিসংঘের নেতৃত্বেই এই উদ্যোগ পরিচালিত হবে।

বাংলাদেশের ভূগোলিক অবস্থানের কারণে এই সহায়তা কার্যক্রমে দেশের ভূমিকাকে ‘অপরিহার্য’ বলে উল্লেখ করেন খলিলুর রহমান। তিনি বলেন, রাখাইনের উপকূল এখনও তাতমাদোর দখলে, তাই অন্য কোনো পথে সহায়তা পাঠানো সম্ভব নয়।

মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় বাংলাদেশ ও আরাকান আর্মি আলোচনায় বসছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা আন্তর্জাতিক নিয়মকানুনে আবদ্ধ একটি রাষ্ট্র, আরাকান আর্মি একটি নন-স্টেট অ্যাক্টর। তাই তাদের জবাবদিহির মধ্যে রাখতে জাতিসংঘকে মাঝামাঝিতে রাখা হয়েছে।”

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের অগ্রগতি

খলিলুর রহমান জানান, দীর্ঘদিন পর ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গার পরিচয় নিশ্চিত করে বাকিদের ভেরিফিকেশনের পথে এগোচ্ছে মায়ানমার। তবে প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ।

তিনি বলেন, “যাদের পরিচয় নিশ্চিত হয়েছে, তারাও কালকেই চলে যাবে না। তাদের নিরাপত্তা, জীবিকা এবং অবস্থান বিবেচনায় নিতে হবে। প্রত্যাবাসন একটি জটিল প্রক্রিয়া।”

তিনি বলেন, রাখাইন অঞ্চল মায়ানমারের সার্বভৌম ভূখণ্ড হলেও সেখানে সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই। এজন্য আরাকান আর্মির সঙ্গে আলোচনা করে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পথ খুঁজছে বাংলাদেশ।

খলিলুর রহমান বলেন, “আরাকান আর্মি তাদের নীতিগত অবস্থান পরিষ্কার করেছে। তারা বলেছে, রোহিঙ্গারা ফিরে যেতে পারবে। আমাদের লক্ষ্য, আগামী ঈদে তারা যেন নিজ দেশে ঈদ করতে পারে।”

গত তিন মাসে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এটা মানুষ ভুলেই যাচ্ছিল। প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস জাতিসংঘে বিষয়টি তোলেন এবং একটি সম্মেলনের আয়োজন করেন। জাতিসংঘ মহাসচিব এবং ইউএনএইচসিআর প্রধান বলছেন, প্রত্যাবাসনই একমাত্র সমাধান।”

তিনি বলেন, “রোহিঙ্গাদের ফেরানোর জন্য এখন আরাকানে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করা জরুরি। যুদ্ধাবস্থায় কাউকে ফেরত পাঠানো সম্ভব নয়। আমরা স্বেচ্ছা প্রত্যাবাসনের পক্ষে, কাউকে জোর করে পাঠানো হবে না। তবে অনেকেই ফিরে যেতে চান, আমরা চাই তারা যেন নিরাপদে এবং স্বেচ্ছায় যেতে পারেন।”

খলিলুর রহমান বলেন, “এই নতুন ধাপে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আমাদের পাশে আছে। প্রত্যাবাসনের জন্য শান্তি প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় অংশগ্রহণ একটি নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে।”

- Advertisement -spot_img
  • সর্বশেষ
  • পঠিত

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত