শনিবার, জুন ৭, ২০২৫
spot_img

দেড় শতাধিক সচিব, অতিরিক্ত সচিবসহ গোপন বৈঠক

নির্বাচনে অংশ নিতে অনলাইন গ্রুপে আ’লীগের প্রার্থী বাছাই

নিজস্ব প্রতিবেদক

আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সক্রিয় হওয়ার জন্য বিভিন্ন অনলাইন গ্রুপে প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ করছে আত্মগোপনে থাকা নেতারা। এরই মধ্যে বিভিন্ন গ্রুপে ভারতে পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও পতিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছে দলের নেতাকর্মীরা। এ ছাড়া আওয়ামী লীগপন্থী সচিব, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিবসহ প্রশাসনের দেড় শতাধিক কর্মকর্তা আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিলে তাদের পক্ষে কাজ করবে বলে একাধিক গোয়েন্দা সূত্র নয়া দিগন্তকে নিশ্চিত করেছে। ওই সূত্র জানায়, এরই মধ্যে তারা কয়েক দফা অনলাইন প্ল্যাটফর্মে কাজ শুরু করেছে। তারা আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারকদের সাথে কথা বলে জেলায় জেলায় নির্বাচনে প্রার্থীর তালিকা বাছাইয়ের কাজও করছে বলে একাধিক গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে।

ওই সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচনে অংশ নিতে ভয়ঙ্কর নাশকতার ছক তৈরি করছে পালিয়ে যাওয়া নেতাকর্মীরা। বিশেষ করে বিভিন্ন ইস্যু তৈরি করে দেশকে অস্থিতিশীল করতে অনলাইন প্লাটফর্মে গ্রুপে গ্রুপে মিটিং করছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় টেলিগ্রাম প্লাটফর্মে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে ভার্চুয়াল আলোচনায় অংশ নিতে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা অনলাইনে মিটিং করেন। মিটিংয়ে প্রধান অতিথি ছিলেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম। মিটিংয়ের মূল উদ্দেশ্য হলো- অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে আন্দোলনের নামে সহিংসতা-নাশকতাসহ পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করে তোলা।

৫ আগস্ট সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগের এক সময়ের প্রভাবশালী নেতাকর্মী, অস্ত্রধারী ক্যাডার আত্মরক্ষার্থে সিলেটের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে পাড়ি জমিয়েছেন ভারতের মেঘালয়ের রাজধানী শিলংয়ে। বর্তমানে পালিয়ে যাওয়া বেশির ভাগ নেতাকর্মী সেখানে অবস্থান করছেন। একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা নয়া দিগন্তকে জানিয়েছে, টেলিগ্রামে সক্রিয় ধানমন্ডি ৩২ নম্বর, ৭১ ফাইটার, বিপ্লবী চট্টলা ও আপনজন গ্রুপে সংগঠিত হয়ে ঢাকাসহ সারা দেশে মাঠে নামার পরিকল্পনা করছে দলটির সিনিয়র নেতারা। গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, সিলেটের সীমান্তের ওপারে ভারতে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা জড়ো হয়ে একের পর এক বৈঠক করছে। ওই নেতারা অনলাইন প্লাটফর্মে বাংলাদেশে অবস্থানরত নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিচ্ছেন।

আপনজন গ্রুপে শেখ হাসিনা নিজেই গ্রুপে অ্যাড হয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিচ্ছেন। শেখ হাসিনার অডিও রেকর্ড করে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, ওই গ্রুপে শেখ হাসিনা তার অডিও বার্তায় বলেছেন, তিনি বাংলাদেশে ফিরবেন। নির্বাচনেও অংশ নিবেন। দলকে চাঙ্গা করতে এসব অডিও বার্তায় নিজস্ব গ্রুপগুলোতে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। শেখ হাসিনা তার দোষকে চেপে নিজেকে নির্দোষ হিসেবে দাবি করেন।

গোয়েন্দাদের তথ্যমতে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর গ্রুপ সবচেয়ে বেশি সক্রিয়। হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে নম্বর ভেসে উঠায় তারা বেছে নিয়েছে টেলিগ্রাম অ্যাপ। ওই গ্রুপের আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা সারা দেশে নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ করে নির্বাচনে অংশ নেয়ার পরিকল্পনা করছে। তারা নির্বাচনে অংশ নিতে রাজপথে নামারও পরিকল্পনা করে।

গ্রুপগুলোতে তারা বলেছেন, ঈদের ছুটি কাটিয়ে ঢাকায় ফেরার পথে সাধারণ মানুষের সাথে মিশে গিয়ে রাজধানীতে জড়ো হয়ে বিক্ষোভসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেবে। এরপর বিক্ষোভ বা কর্মসূচিতে হট্টগোল হলে তারা অ্যাকশনে যাবে। এমন ভয়ঙ্কর পরিকল্পনার ছকে খোদ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নড়েচড়ে বসেছে। তারা বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্য-উপাত্ত নিয়ে নজরদারি বাড়াতে শুরু করেছে। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, দেশের অন্যতম প্রধান রফতানি বাজার, বিশেষ করে তৈরি পোশাকের বড় আমদানিকারক দেশ যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশী পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। একইসাথে ভারত, পাকিস্তান, চীন, ভিয়েতনামসহ দক্ষিণ এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশেও আরোপ করা হয়েছে উচ্চ শুল্ক। তবে এ তালিকায় ভারত পাকিস্তানের চেয়ে বেশি শুল্ক আরোপ করা হয়েছে বাংলাদেশের ওপর। গত বুধবার ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউজে সংবাদ সম্মেলনে উচ্চমাত্রার এ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই ইস্যুকে সামনে নিয়ে তৈরি পোশাক শিল্পে অস্থিরতা তৈরি করতে অনলাইনে সহিংসতার পরিকল্পনা করা হয়।

গতকালের ‘বিপ্লবী চট্টলা’ টেলিগ্রামে আলোচনার তালিকায় যারা : চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ মুহাম্মাদ আতাউর রহমান আতা, মহানগর উত্তরের যুবলীগ সাংগঠনিক সম্পাদক শহীদুল হক রাসেল, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও বোয়ালখালী পৌরসভা মেয়র জহিরুল ইসলাম জহুর, ফটিকছড়ি নাজিরহাট পৌরসভা মেয়র এ কে এ জাহিদ, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ৩৪ নম্বর পাথরঘাটা ওয়ার্ড কাউন্সিলর পুলক খাস্তগীর, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক উপকমিটির সদস্য মোহাম্মদ টিপু, সদস্য বন ও পরিবেশবিষয়ক উপকমিটির সদস্য সাবরিনা চৌধুরী, চট্টগ্রাম মহানগর নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান হোসেন ইমু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম ছমদানী জনি। অনুষ্ঠানটির সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ১৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নুর মোস্তাফা টিনু। সূত্র- নয়াদিগন্ত

- Advertisement -spot_img
  • সর্বশেষ
  • পঠিত

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত