মঙ্গলবার, জুন ১৭, ২০২৫

গণপূর্তের জমিতে অবৈধ ভবন নির্মাণ বন্ধে অভিযান নিয়ে গড়িমসি

দায় চাপিয়ে রহস্যজনক ভূমিকায় সরকারি ৩ দপ্তর

মোটা টাকায় ম্যানেজ করার দায়িত্ব পালন করছে আবুল কন্ট্রাক্টর-করিম-জাহেদ

নিজস্ব প্রতিবেদক

কক্সবাজার শহরের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের পূর্বে গণপূর্তের প্লটে রাতদিন অবৈধভাবে ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। দৈনিক দুই শতাধিক শ্রমিক গত তিন মাস ধরে অবৈধ ভবন নির্মাণের কাজে নিয়োজিত রয়েছে। কক্সবাজার গণপূর্ত বিভাগ ভবন নির্মাণ অবৈধ স্বীকার করলেও এ পর্যন্ত কোন সরকারি সংস্থা অভিযানে যায়নি। উপরন্তু কক্সবাজার গণপূর্ত বিভাগ, কক্সবাজার উন্নয়ণ কর্তৃপক্ষ এবং কক্সবাজার জেলা প্রশাসন এই তিন সরকারি সংস্থা অদৃশ্য কারণে অবৈধ ভবন নির্মাণ কাজ বন্ধ করার পদক্ষেপ নেয়নি বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন।

কক্সবাজার গণপূর্ত বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আরিফুর রহমান ভবন নির্মাণ অবৈধ স্বীকার করে জানান, উচ্ছেদ অভিযান চালাতে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দরকার। এ বিষয়ে আমরা কউককে চিঠি দিয়েছি। জেলা প্রশাসককেও দিয়েছি। কিন্তু কেন অভিযান হচ্ছেনা এর উত্তর আমার কাছে নেই। তিনি আরো জানান, আমাদের (গণপূর্ত) কাছে বুলডোজারসহ ভবন ভাঙ্গার প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নেই। তাই জেলা প্রশাসন এবং কউকের সহযোগিতা প্রয়োজন। চিঠির বিষয়ে কউক এবং জেলা প্রশাসনের পক্ষে সূত্র নিশ্চিত করলেও সংস্থাগুলো একে অপরের উপর দায় চাপিয়ে ভবন নির্মাণ কাজ বন্ধে গড়িমসি করছে।

এদিকে, অভিযানের অভাবে হোটেল-মোটেল জোনে গণপূর্তের বিপুল পরিমাণ জমি ইতোমধ্যে বেহাত হয়ে গেছে। তাই স্থানীয়রা অভিযানের নামে এসব নাটক বন্ধ করে গণপূর্তের বেহাত হওয়া জমি উদ্ধারের দাবী জানিয়েছে। সেখানকার ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন জানান, ইতোপূর্বে অনেক অভিযান দেখেছি। কিন্তু দখলদারের বিরুদ্ধে কোন মামলা বা উপযুক্ত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, কউক ও গণপূর্ত এ দুই সরকারি দপ্তর ডাক-ঢোল বাজিয়ে অতিতে দিনে উচ্ছেদ অভিযান করলেও রাতে পূনরায় নির্মাণের নজির রয়েছে। শুধু তাই নয়, সেখানে কারো বিরুদ্ধে সরকারি দপ্তর হতে কোন প্রকার আইনি ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। ফলে উচ্ছেদ অভিযান নামক শব্দটি সৈকত বহুমূখি সমবায় সমিতির সদস্যদের মাঝে সাধারণ বিষয় ও ভয়ের কিছু নয় বলে মনে করেন অবৈধ স্থাপনা নির্মাণকারীরা।

অপরদিকে গেল সরকার পতনের পর দলীয় পরিচয়ে চলছে নতুন ৮টি ভবন নির্মাণের কাজ। তদ্মধ্যে, ঈদগাও এলাকার নাছির উদ্দিনের মালিকানাধীন পরিচয়ে ৫৮ নং প্লটে বীচ গার্ডেনের শাহীনের নেতৃত্বে স্থাপনা নির্মাণ চলছে। একই সাথে তার পাশে সেলিম বদ্দারের মালিকানা পরিচয়ে তার ছেলে জাহেদ ও করিম নামের এক ব্যক্তির নেতৃত্বে ৫৭ নং প্লটে চলছে প্রকাশ্যে নির্মাণ কাজ।

এ বিষয়ে জানতে সৈকত জোনের আলোচিত আবুল কন্ট্রাক্টর বলেন, এখন আওয়ালীগ সরকার নেই। তাই স্থাপনা নির্মাণে বাধাঁও দেয় না। কম বেশি কউক-গণপূর্ত কর্মকর্তারা জানেন। আপনি সমিতির সাথে কথা বলেন, আরো তথ্য পাবেন। তিনি প্রতিবেদককে অনুরোধ করে বলেন, সে অসুস্থ স্থাপনার বিষয়ে যা করার করবো নিউজ করবেন না প্লিজ।

এছাড়াও ইতোপূর্বে সেখানে প্রতিযোগিতা দিয়ে প্রশাসনের গুড়িয়ে দেয়া প্রায় ৩০টি স্থাপনায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে ম্যানেজ করে পূণরায় কাজ করছেন আলোচিত আবুল কন্ট্রাক্টর নামের উল্লেখিত ব্যক্তি। এসব নির্মানাধীন ভবনে পলিথিন দিয়ে ঢেকে কাজ চালিয়ে গেলেও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের যেন কোন মাথাব্যাথা নেই।

এদিকে অবৈধ স্থাপনা বন্ধে সাংবাদিক ও স্থানীয় এলাকাবাসী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও গণপূর্ত বিভাগে একাধিক অভিযোগ করলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। অন্যদিকে গণপূর্ত বিভাগ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নিতে চিঠি দেওয়ার ‘অজুহাত’ দেখিয়ে রহস্যজনকভাবে নিরবতা পালন করছেন।

জমি সরকারের হলেও সেখানে অনুমোদিত কোন নকশা ছাড়া এসব অবৈধ ভবন তৈরীর বিরুদ্ধে সর্বশেষ ২০২৩ সালের ১১ ডিসেম্বর অবৈধ স্থাপনায় অভিযান চালিয়ে নির্মান কাজের সরঞ্জাম জব্দ করেন উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা। তবে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না, বারংবার অভিযান চালিয়ে আংশিক আংশিক স্থাপনা ভেঙ্গে দিলেও অভিযানের পর আরো দ্রুত গতিতে স্থাপনা নির্মানের কাজ করছে শ্রমিকরা।

স্থানীয়দের মধ্যে অভিযোগ উঠে, উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে এখানে রহস্যজনক অভিযান চালানো হয় বহুবার। এই পর্যন্ত সৈকত বহুমূখী এলাকায় যতগুলো অবৈধ ভবন নির্মানে উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অভিযান চালানো হয়েছে তার মধ্যে একটির কাজও বন্ধ নেই। তবে কি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষও কি ভূমিদ্যুদের কাছে অসহায়। এই প্রশ্নও অনেকের। ভবন নির্মানের মিস্ত্রি রমিজ বলেন, গত এক বছর আগে উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অভিযানে ১০টির মত স্থাপনা বুলডোজার ও স্কেভেটর দিয়ে গুড়িয়ে দেন। কয়েকজন শ্রমিক আটকসহ সরঞ্জাম জব্দ করেছে। তবে আমরা এখন অল্প কিছু শ্রমিক কাজ করছি।

অভিযোগ রয়েছে, গণপূর্ত বিভাগ ও কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কয়েকজন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজসে গণপূর্তের জমিতে অবৈধভাবে এসব বহুতল ভবনের নির্মান কাজের সহযোগিতা দিচ্ছেন। এমনকি স্থানীয় লোকজনদের অভিযোগ, উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও গণপূর্তের কর্মকর্তাদের এসব বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করলেও উচ্ছেদ অভিযান হচ্ছে না। জেলা প্রশাসনেরও কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। এভাবেই উচ্ছেদ অভিযান নিয়ে গড়িমসি চলছে। যার কারণে কোটি টাকার সরকারি সম্পদ বেহাত হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে অনুমোদনহীন ভবনের কারণে অপরিকল্পিত নগরায়ণে ঘিঞ্জি এলাকায় পরিণত হচ্ছে।

স্থানীয়রা আরো জানান, সরকারি জমিতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত নকশা ছাড়া যত্রতত্র বহুতল ভবন নির্মানের ফলে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের আলোকে কক্সবাজার পৌরসভা কর্তৃক নির্মাণাধীন রাস্তা এবং ড্রেইন নির্মাণেও বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া উক্ত জমিতে পরিচিহ্নিত করা সবুজ বেস্টনি প্রকল্পসহ সরকারি অন্যান্য প্রকল্প বাস্তবায়নও বাধাগ্রস্থ হবে।
প্রধান সড়কের পাশে নির্মাণাধীন একটি স্থাপনার মালিক খরুলিয়ার জসিম উদ্দিন বলেন, অবৈধভাবে বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ করছি না। এটি সরকারি জায়গা হলেও আমাদের সমিতির কাগজ আছে। উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অনুমতির বিষয়ে তিনি বলেন, অনুমতি না নিয়ে কি কাজ করতে পারে? অনুমতি আছে কি না আমার জানা নেই। মালিক প্রবাসী জেনে দেখতে হবে। তবে বাহারছড়া এলাকার টিটু এসব বিষয়ে বলতে পারবেন।

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত