রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে নির্ধারিত সময়ে ট্রেন ছেড়ে যাওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন যাত্রীরা। এবারের ঈদযাত্রার দ্বিতীয় দিনে গতকাল বুধবার সকাল থেকে বেশিরভাগ ট্রেনই সময়মতো অথবা কয়েক মিনিট বিলম্বে যাত্রা শুরু করে। এতে আগের বছরগুলোর মতো যাত্রীদের স্টেশনে এসে দীর্ঘ অপেক্ষার ভোগান্তি পোহাতে হয়নি। রেলওয়ে কর্র্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ঈদযাত্রার বাকি দিনগুলোতেও ট্রেন ছাড়ার এমন সময়ানুবর্তিতা বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এবার ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের জন্য ১০টি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন আন্তঃনগর ট্রেনে ৪৪টি অতিরিক্ত বগি সংযোজন করা হয়েছে। যাত্রীদের সুবিধার্থে মোট আসনের ২৫ শতাংশ দাঁড়িয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
গতকাল কমলাপুর স্টেশন ঘুরে সকাল থেকেই ঈদ উপলক্ষে ঘরে ফেরা মানুষের চাপ বাড়তে দেখা যায়। অনেকেই ট্রেন ছাড়ার নির্ধারিত সময়ের আগেই চলে আসেন স্টেশনে। টিকিট কাউন্টারের সামনেও কিছু মানুষের জটলা দেখা গেছে।
রাজশাহীগামী ট্রেনের যাত্রী জাহাঙ্গীর আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পরিবারসহ ঈদ করতে বাড়ি যাচ্ছি। তবে এবার আর আগের মতো ভোগান্তি নেই। স্টেশনে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে দেখলাম লাইনে ট্রেন রয়েছে। খুব একটা অপেক্ষা করতে হয়নি।’
নওগাঁগামী ট্রেনের যাত্রী সৈয়দ মাকসুদুর রহমান বলেন, ‘টিকিট নিয়ে ঝামেলা হয়নি। এখন যাত্রীর চাপ কম, তাই পরিবারের সদস্যদের আগে পাঠিয়ে দিচ্ছি। এরপর আমি একা যেতে কোনো সমস্যা হবে না।’
কমলাপুর রেলস্টেশনের ব্যবস্থাপক শাহাদাত হোসেন জানান, গতকাল ভোর থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত ১৬টি ট্রেন কমলাপুর থেকে ছেড়ে গেছে। এর মধ্যে মাত্র একটি ট্রেন ছাড়তে বিলম্ব হয়েছে। সেটি হচ্ছে ব্রাহ্মণবাড়িয়াগামী তিতাস কমিউটার। এটি ছাড়তে দেরি হয়েছে ৪৫ মিনিট। ট্রেনটি কমলাপুর পৌঁছাতে দেরি হওয়ার কারণে ছাড়তেও দেরি হয়েছে।
শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘প্রতিদিন ৬৯টি ট্রেন ঢাকা ছেড়ে যাবে। এর মধ্যে ৪৩টি আন্তঃনগর। ট্রেন ছাড়ার দুই ঘণ্টা আগে শোভন ও সুলভ শ্রেণির কোচে মোট আসনের ২৫ শতাংশ দাঁড়িয়ে যাত্রার টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। আগামীকাল (আজ) বৃহস্পতিবার থেকে ঈদযাত্রায় বিশেষ ট্রেন থাকবে।’
এদিকে গতকাল সকালে কমলাপুর রেলস্টেশনে ঢাকা-নরসিংদী-ভৈরববাজার রুটে নতুন এক জোড়া কমিউটার ট্রেন এবং ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে চলাচলকারী নারায়ণগঞ্জ কম্পিউটার ট্রেনের রেক প্রতিস্থাপন (মানোন্নয়নকৃত কোচ দিয়ে) উদ্বোধন উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে অংশ নিয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘অনলাইনে ট্রেনের টিকিটের বিষয়ে যেসব অনিয়ম ছিল সেগুলোর অনেকটাই কমে গেছে। ঈদের সময় টিকিটের চাহিদা চার-ছয় গুণ বেড়ে যায়। ট্রেনের সংখ্যা না বাড়াতে পারলে প্রতি ছয়জনের মধ্যে একজন টিকিট পাবে না। তার পরও রেলের কোনো কর্মকর্তা টিকিট জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত থাকলে আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেব। ইতিমধ্যে ২২ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘রেলের লোকসানের একটি কারণ হলো, বিনা টিকিটে যাত্রী পরিবহন। রেলওয়ে সেবার মূল্য অনেক কম। অনেকেই ট্রেনে উঠে ভাড়া দেন না। এইভাবে যদি চলতে থাকে, তাহলে রেলওয়ের সেবা বন্ধ হয়ে যাবে। লোকসান বাড়লে রেলের সেবা কমানো ছাড়া আমাদের কোনো উপায় থাকবে না।’
রেলওয়েতে দুর্নীতির বিষয়ে ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘রেলের সচিব ও ডিজিকে সুনির্দিষ্ট টার্গেট (লক্ষ্যমাত্রা) দিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা মনিটর করব এক টাকা উপার্জন করতে কত টাকা খরচ হয়। সেটা অবিলম্বে ২-এর নিচে আনতে হবে। এটা করতে হলে বাধ্য হয়ে তাদের দুর্নীতি কমাতে হবে।’
রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আফজাল হোসেন বলেন, ‘ঈদের সময় কোনো ট্রেনে সিট খালি থাকে না। ঈদের সময় প্রতিটি ট্রেনে ২৫ ভাগ স্ট্যান্ডিং টিকিট দেওয়া হয়।’