মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা, আসসালামু আলাইকুম। আমি মো: শাহাবুদ্দিন, সভাপতি, লবণ চাষী কল্যাণ সমিতি। লবণ চাষীদের পক্ষ থেকে কক্সবাজারে আপনাকে স্বাগতম। জুলাই-আগস্ট মাসে ফ্যাসিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদে নিহত ও আহত বীরদের প্রতি আমাদের সশ্রদ্ধ কৃতজ্ঞতা।
মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা, লবণ আমাদের অত্যাবশ্যকীয় পণ্য। আত্মসামাজিক প্রেক্ষাপটে লবণ চাষীদের জীবন মান উন্নয়নে লবণ চাষী কল্যাণ সমিতি কাজ করে থাকে। বাংলাদেশের মোট লবণের ৯০% কক্সবাজার ও ১০% চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালীতে উৎপাদিত হয়ে থাকে। অত্র অঞ্চলের ৭০ হাজার একর জমিতে লক্ষাধিক চাষী লবণ উৎপাদন করে। এই শিল্পের উপর ৩০ লক্ষ মানুষ নির্ভরশীল। জাতীয় অর্থনীতিতে এই শিল্পের অবদান প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা। লবণ আমদানি বন্ধ করতে হবে, এই শিল্পকে রক্ষা করতে হবে, চাষীদের ন্যায্য মূল্য পেতে হবে এবং উদ্বৃত্ত লবণ রপ্তানি করতে হবে।
এই বিষয়ে সরকারকে সহযোগীতা করা আমাদের লক্ষ্য। আমাদের চাষীদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলস্বরূপ বিগত মৌসুমে ৬৩ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ লবণ উৎপাদিত হয়েছিল যা দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব ছিল। কিন্তু বিগত সরকার তা করেনি, চলতি মৌসুমে চাষীরা ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না। উৎপাদন খরচ ৩৫০ টাকা হলেও বিক্রি করতে হচ্ছে ২০০-২২০ টাকায়।
চাষীদের পক্ষ থেকে আমাদের কিছু ন্যায্য দাবি আপনার কাছে পেশ করছি —
* ন্যায্য মূল্য নিশ্চিতকরণ: জাতীয় লবণ নীতির আলোকে বাফার স্টক গড়ে তোলার মাধ্যমে প্রতি মৌসুমে উৎপাদিত লবণের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা হোক। এই লক্ষ্যে, অবিলম্বে ২ লক্ষ মেট্রিক টন লবণ সরকারিভাবে ক্রয় করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।
* উৎপাদন খরচ হ্রাস:
সরকারি খাস জমি অবৈধ দখলমুক্ত করে, বিসিকের মাধ্যমে প্রান্তিক লবণ চাষীদের মাঝে বরাদ্দ দিন, যাতে উৎপাদন খরচ কমানো যায়।
* দারিদ্র্য নিরসন:
বর্ষা মৌসুমে লবণ চাষীদের অবসরকালীন সময়ে সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় সহায়তা প্রদান করুন, যাতে তারা দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পেতে পারে।
* গুণগত মান উন্নয়ন:
বিশ্বমানের লবণ উৎপাদনের জন্য কক্সবাজারে একটি লবণ গবেষণা ইন্সটিটিউট এবং প্রতিটি উপজেলায় লবণ চাষী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন জরুরী।
* শিল্পের বিকাশ:
সম্ভাবনাময় লবণ শিল্পের সার্বিক উন্নয়নের জন্য একটি বাস্তবিক ও পূর্ণাঙ্গ লবণ বোর্ড গঠনের দাবী বহুদিনের।
* স্বয়ংসম্পূর্ণতা ও রপ্তানি:
লবণ আমদানি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে, উৎপাদিত উদ্বৃত্ত লবণ রপ্তানির ব্যবস্থা করুন, যাতে জাতীয় অর্থনীতিতে এই শিল্পের অবদান আরও বৃদ্ধি পায়।
এই দাবিগুলো পূরণ হলে, লবণ চাষীরা তাদের ন্যায্য অধিকার ফিরে পাবে এবং এই শিল্প জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।
লবণ শিল্পের সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলার সুযোগ দানের জন্য মাননীয় প্রধান উপদেষ্টাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে শেষ করছি, আল্লাহ হাফেজ।