দীর্ঘ আট বছর পর পরিবারের সদস্যদের সাথে ঈদ করছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী লন্ডনে রোববার ছেলে তারেক রহমান, দুই পুত্রবধূ ও তিন নাতনীকে নিয়ে ঈদ করছেন তিনি।
মির্জা ফখরুল আরো বলেন, আজ সেখানে ঈদ উদযাপন হচ্ছে।
পরিবারের সাথে আট বছর পর উনি এই ঈদ উদযাপন করছেন। ‘দিস ইজ এ গুড থিংক ফর আস।’ কবে আসবেন বিএনপি চেয়ারপারসন এ প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ম্যাডাম সম্ভবত যতটুকু শুনেছি আমি, ফাইনাল নিশ্চিত না, এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে তিনি দেশে ফিরবেন।’ গত ৮ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসনকে লন্ডনে নিয়ে যাওয়া হয়।
খালেদা জিয়ার কারাগার জীবন প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ম্যাডামের লিভার সিরোসিস হয়েছে জেলখানার মধ্যে। সেখানে তার কোনো চিকিৎসা হয়নি। আমরা বিশ্বাস করি, কারগারে তাকে স্লু পয়েজিং করা হয়েছে। এটা যদি ম্যাডামকে জিজ্ঞাসা করেন উনি বলবেন না। কারণ উনি সেই ধরনের মানুষ না… একবারের জন্য বলবেন না।’
তিনি বলেন, ‘ম্যাডামকে যে ঘরে রাখা হয়েছিল, সেই ঘরটা ছিল স্যাঁতস্যাঁতে। সমস্ত দেয়ালের আস্তর ভেঙ্গে ভেঙ্গে পড়ছিল এবং ইুঁদুর দৌড়াদৌড়ি করত। এ রকম অবস্থা ফেইস করেছেন আমাদের ম্যাডাম। এরপরেও আমি বেশি বলতে চাই না যে কাদম্বিনীকে মরিয়া প্রমাণ করতেই হইবে যে সে মরে নাই। এখন নতুন করে পরীক্ষা দিতে হবে।’
অন্যদিকে বিএনপির চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, আপনজনকে নিয়ে ঈদের দিনটি একান্তে কাটাচ্ছেন লন্ডনে অবস্থানরত বেগম খালেদা জিয়া।
তিনি বলেন, ‘লন্ডনে ঈদুল ফিতর উদযাপন হচ্ছে। আপনারা জানেন, ম্যাডাম উনার বড় ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেবের বাসায় আছেন। ঈদের দিনটি উনি বাসায় আপনজনদের নিয়ে একান্তে কাটাবেন।’
তিনি আরো বলেন, বাসায় দুই পুত্রবধু (ডা. জোবাইদা রহমান ও সৈয়দা শামিলা রহমান) আছেন। তিন নাতনি (ব্যারিস্টার জায়মা রহমান, জাফিয়া রহমান ও জাহিয়া রহমান)। ম্যাডামকে ঘিরে ঈদের সব আয়োজন তারাই সাজিয়েছেন। কারণ দীর্ঘদিন বছর পর ম্যাডাম তার আপনজনদের সাথে ঈদ করতে যাচ্ছেন। বুঝতেই পারছেন, এখানে অনেক আবেগ জড়িত।
খালেদা জিয়ার লন্ডনে এটি তৃতীয় ঈদ উদযাপন। এবার ১০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো তিনি ছেলে তারেক রহমানের বাসায় ঈদ পালন করছেন। এর আগে ২০১৭ সালে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে গিয়ে ছেলের বাসায় ঈদুল আজহা উদযাপন করেছিলেন। এরও আগে এক-এগারোর পরে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে প্রায় আট বছর পর লন্ডনে পরিবারের সদস্যদের সাথে ঈদ উদযাপন করেছিলেন।
বেগম খালেদা জিয়া কেমন আছেন জানতে চাইলে অধ্যাপক জাহিদ বলেন, ‘ তিনি এই মুহূর্তে আগের চেয়ে অনেকটা ভালো আছেন। আগের চাইতে তিনি বলতে পারেন, আলহামদুলিল্লাহ উনি মাচ বেটার।’
ডা. জাহিদ বলেন, ‘ম্যাডাম দেশবাসীসহ দলীয় নেতা-কর্মীদেরকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেবও দেশবাসীদের আপনাদের মাধ্যমে ঈদের শুভেচ্ছ জানাচ্ছেন।’
গত ৮ জানুয়ারি শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির পাঠানো রাজকীয় এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী চিকিৎসার জন্য লন্ডন পৌঁছান, হিথ্রো আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে সরাসরি তাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে ডেভেনশায়ার প্লেসে ‘দ্য লন্ডন ক্লিনিক’ এ ভর্তি করা হয়। তিনি এই হাসপাতালে অধ্যাপক জন প্যাট্টিক কেনেডির তত্ত্বাবধায়নে ১৭ দিন চিকিৎসাধীন ছিলেন।
এরপর লন্ডন ক্লিনিকে তার জন্য গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের সিদ্ধান্তে ছেলে তারেক রহমানের বাসায় অধ্যাপক প্যাট্রিক কেনেডি ও অধ্যাপক জেনিফার ক্রসের তত্ত্বাবধায়নে চিকিৎসাধীন থাকবেন খালেদা জিয়া। ৭৯ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন থেকে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস ও আর্থ্রাইটিসসহ নানা শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন।
২০১৫ সালে লন্ডনে ঈদের পর ২৫ সেপ্টেম্বর বিএনপি চেয়ারপারসন নেতা-কর্মীদের সাথে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। ওই অনুষ্ঠানে মায়ের পাশে তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জোবাইদা রহমানও ছিলেন।
২০১৮ সালে বিএনপির চেয়ারপারসনকে একটি দুর্নীতির মামলায় গ্রেফতার হয়ে পুরনো ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী ছিলেন। করোনার সময়ে তাকে বিশেষ কারামুক্তি দেয়া হয়। কারাবন্দী অবস্থায় তার চারটি ঈদে কেটেছে কারাগারে ও বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রপতি মো: সাহাবুদ্দিনের এক আদেশে খালেদা জিয়া মুক্তি পান। এরপর দুর্নীতির যে দু’টি মামলায় তিনি কারাবন্দী হয়েছিলেন, সেগুলোর রায় বাতিল করেন আদালত।
সূত্র : বাসস