রবিবার, জুন ৮, ২০২৫
spot_img

সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করার মিশনে নেমেছে ভারত : জামায়াত সেক্রেটারি

নিউজ ডেস্ক : ভারত আমাদের দেশকে নিয়ে স্বাধীনতার পর থেকেই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত’ জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, ‘দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করার মিশনে নেমেছে ভারত। তারা আমাদের দেশ নিয়ে তাদের মিডিয়াতে নানা রকম গুজব ছড়াচ্ছে এবং প্রচার ও প্রকাশ করছে।’

বুধবার (২৬ মার্চ) জামায়াত ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ আয়োজিত ‘মহান স্বাধীনতা দিবস ও জাতীয় দিবস’ উপলক্ষে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

‘শেখ মুজিবুর রহমান কখনো চায়নি পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশ হোক’ জানিয়ে অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘তিনি দেশপ্রেমে নয় ক্ষমতার মসনদে বসার লড়াই করেছে। ৭ মার্চ যদি শেখ মুজিব স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েই থাকে, তাহলে ৭ মার্চ থেকে ২৩ মার্চ শেখ মুজিব পাকিস্তানের সাথে মিটিংয়ে বসলো কেন?- ওই মিটিংয়ের গোপন রহস্য হচ্ছে, তিনি বারবারই চেয়েছেন পাকিস্তানের ক্ষমতার মসনদে বসতে।’

তিনি বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামীর বাংলাদেশ ব্যতিত আর কোথাও কোনো ঠিকানা নেই। যাদের ভারতে আর লন্ডনে দ্বিতীয় ঠিকানা আছে তারাই জামায়াতকে স্বাধীনতা বিরোধী, দেশ বিরোধী বলে তখন এটি ভূতের মখে রাম-রাম বলার মতোই হয়ে যায়।’

‘কোনো গুজবে কান না দিয়ে দেশবাসীকে জুলাই-আগস্টের ন্যায় ঐক্যবদ্ধ’ থাকার আহ্বান জানিয়ে জামায়াতের সেক্রেটারি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের মত বিরোধী রাজনৈতিক দলকে ঘায়েল করার মিশনে না নেমে আদর্শিক রাজনীতি চর্চা করতে হবে।’ বিরোধীতা করার আগে আয়নায় নিজের চেহারা দেখার এবং পূর্বের ইতিহাস জানারও পরামর্শ দেন অধ্যাপক পরওয়ার।

এসময় তিনি আরো বলেন, ‘জামায়াত তাদের সাথে থাকলে হয় সঙ্গী আর সাথে না থাকলে হয় জঙ্গি! যারা জামায়াতে ইসলামীকে স্বাধীনতাবিরোধী বলে, তাদেরকে জামায়াতের গঠনতন্ত্র পড়ার আহ্বান জানান মিয়া গোলাম পরওয়ার।

‘জামায়াতে ইসলামী কাদা ছোড়াছুড়ির রাজনীতি করে না’ জানিয়ে অধ্যাপক পরওয়ার বলেন, ‘জামায়াত মুখ খুলতে চায় না। যারা জামায়াতকে স্বাধীনতাবিরোধী বলে তাদের অনেকের বাবাও রাজাকার ছিল। কোন দলের কোন নেতার পরিবারের কারা কারা স্বাধীনতাবিরোধী ছিল সেটা এদেশের জনগণ জানে। আজকে যারা আওয়ামী ফ্যাসিবাদের ভাষায় কথা বলে, তারাও কিন্তু ক্ষমতায় গিয়ে স্বাধীনতা বিরোধীদের এমপি-মন্ত্রী এমনকি রাষ্ট্রপতিও বানিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘জামায়াতের বিরোধীতা করার আগে, জামায়াতে অবদানের কথা স্মরণ করতে হবে। জামায়াতের সমর্থন ব্যতিত সরকার গঠন করতে পারেননি। রাজপথে আন্দোলন করতে পারেননি। ক্ষমতায় গিয়ে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের হত্যা করার পরও জামায়াত জাতীয় স্বার্থে সব কিছু ভুলে ফ্যাসিবাদ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে জোটবদ্ধ আন্দোলন করেছে। ঐ আন্দোলনে আপনাদের দলের কয়জন নেতাকর্মী রাজপথে মাইর খেয়েছে আর জামায়াত-শিবিরের কতজন মাইর খেয়েছে, রক্ত দিয়েছে, নিজের বিবেককে প্রশ্ন করে জানতে পারবেন।’

তিনি সব ভেদাভেদ ভুলে জাতীয় স্বার্থে সবদলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘মতের দ্বিমত থাকতে পারে। কিন্তু দেশ ও জাতির সাথে আমাদেরকে এক হতে হবে।’

নির্বাচন প্রসঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর অবস্থান ব্যাখ্যা করে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে এবং গণহত্যার বিচার করে অন্তবর্তী সরকার যখন নির্বাচন দিবে জামায়াতে ইসলামী তখনই নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। জামায়াতে ইসলামী শুধু নিয়ম রক্ষার একটি নির্বাচন চায় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অবাধ, সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে।’

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘যারা স্বাধীনতা যুদ্ধের সোল্ড এজেন্ট দাবি করে তাদের কতজন নেতা মুক্তিযুদ্ধে মারা গেছে?’

তিনি বলেন, ‘দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জাতিকে বিভিন্নভাবে বিভক্ত করা হয়েছে। ভারত-পাকিস্তান-বাংলাদেশ ত্রিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধকালীন ঘটনা মীমাংসিত। কারো প্রতি আর কোনো রাগ ক্ষোভ না রাখার এবং সকল ভেদাভেদ ভুলে যাওয়ার ঐ চুক্তিতে বাংলাদেশের পক্ষে স্বাক্ষর করেছে ড. কামাল হোসেন। যিনি এখনো বেঁচে আছেন। তবে তার নিরবতায় জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রফিকুল ইসলাম খান ড. কামাল হোসেনকে ভারত-পাকিস্তান-বাংলাদেশ ত্রিপক্ষীয় চুক্তির লক্ষ্য-উদ্দেশ্য জাতির সামনে পরিস্কার করার দাবি জানান।

তিনি আরো বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ক্রেডিট ছাত্রদের দিতে হবে। যারা এই ক্রেডিট নিজেদের দলের দাবি করে, তারা আওয়ামী লীগের মতই ফ্যাসিস্ট। আওয়ামী লীগ ১৯৭১ হাইজ্যাক করেছে এরা ২০২৪ হাইজ্যাক করতে চায়।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের পরিচালনায় সভায় আরো বক্তব্য দেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি যথাক্রমে মো: দেলাওয়ার হোসেন, মোহাম্মদ কামাল হোসেন ও অধ্যাপক ড. আব্দুল মান্নান।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি মো: শামছুর রহমান, কর্মপরিষদের সদস্য যথাক্রমে মাওলানা ফরিদুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট এস এম কামাল উদ্দিন, মাওলানা মোশাররফ হোসেন, কামরুল আহসান হাসান, শাহীন আহমেদ খান, প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সহকারী সম্পাদক আবদুস সাত্তার সুমনসহ মহানগরীর নেতারা।

- Advertisement -spot_img
  • সর্বশেষ
  • পঠিত

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত